নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়ার উদ্দেশ্যে বর্তমানে সমাজ মাধ্যম হয়ে উঠেছে অন্যতম জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। যেখানে খুব সহজেই মানুষ টাকা উপার্জনের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন। দিন বদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কাছে খুলে যাচ্ছে একাধিক দরজা।
এই সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগিয়েই মানুষ নিজের জীবন ও জীবিকার হদিশ খুঁজে পাচ্ছে। একে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠছে বিভিন্ন ধরনের পেশা। করোনা মহামারিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সূচনা, তারপর থেকেই কাজের সংজ্ঞাটা বদলে গিয়েছে আমূল।
অফিসের যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বাড়িতে বসেও উপার্জন করতে পারেন এই ধারণাটা অতটাও প্রচলিত ছিল না এর আগে। বর্তমানে মানুষ বুঝতে শিখেছে সমস্ত মাধ্যমকে হাতিয়ার করেই উপার্জন করার এক বড় স্কোপ রয়েছে।
ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং এর কনসেপ্টটি। তবে এখনো পর্যন্ত অনেকের কাছেই অজানা কি এই ডিজিটাল মার্কেটিং! ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবেই বা করতে হয়! কি কি হাতিয়ার কাজে লাগানো যায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর জন্য! কিভাবে এখান থেকে ইনকাম করার সুযোগ রয়েছে? সবকিছুই আমাদের প্রতিবেদনে রইলো বিস্তারিত।
আজকে আমরা কোন কোন বিষয় সম্পর্কে জানব তা সবার আগে একবার চোখ বুলিয়ে নিই
- ডিজিটাল মার্কেটিং কী?
- সিকিউরিটি কেমন?
- কীভাবে শিখবেন?
- এটি শেখার জন্য কোর্স গুরুত্বপূর্ণ কিনা?
- কলকাতার কোথায় কোথায় ডিজিটাল মার্কেটিং পড়ানো হয়?
- ডিজিটাল মার্কেটটার হিসাবে চাকরির ভবিষ্যৎ কী রয়েছে?
- ফ্রিল্যান্সিংয়ের সুযোগ রয়েছে কিনা?
- কীভাবে শুরু করবেন?
- কীভাবে হবেন একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার?
- ডিজিটাল মার্কেটের হিসাবে কোন কোন বিষয়ে জানা আপনার গুরুত্বপূর্ণ?
ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
স্মার্টফোনের সঙ্গে ইন্টারনেটের যোগসূত্রকে কাজে লাগিয়েই আজকে অনলাইনে বিভিন্ন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে টাকা উপার্জনের অন্যতম রাস্তা খুলে গিয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং হল ওয়েবসাইট, অ্যাপস, মোবাইল ডিভাইস, সোশ্যাল মিডিয়া, সার্চ ইঞ্জিন ইত্যাদিকে কাজে লাগিয়ে নিজের পণ্য এবং পরিষেবা প্রচার এবং তা বিক্রির প্রচেষ্টা।
কলকাতায় কোথায় কোথায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোর্স করতে পারবেন?
কলকাতায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর বহু সংস্থা কোর্স করিয়ে থাকে। তারমধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য সংস্থার নাম এখানে দেওয়া হল:
১) NIFT Kolkata- সার্টিফিকেট ইন ডিজিটাল মার্কেটিং।
২) IIM Calcutta- এ্ক্সিকিউটিভ প্রোগ্রাম অন ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি সম্পর্কে কোর্স করার জন্য এটি উপযুক্ত ইনস্টিটিউশন।
৩) Karmick Institute, Kolkata- সার্টিফিকেট ইন অ্যাডভান্স ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে পারবেন এখান থেকে।
৪) IIDE- অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করার সুযোগ পাবেন।
৫) NIIT- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শর্ট টার্ম কোর্স করার জন্য এটি আদর্শ একটি ইনস্টিটিউট।
একজন ডিজিটাল মার্কেটার কী কী জানতে হয়?
- মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- মার্কেটিং অটোমেশন
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
কোন সেক্টরের ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা সবচেয়ে বেশি রয়েছে?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে কমবেশি সব সেক্টরেই রয়েছে, ডিজিটাল মার্কেটিং এর একগুচ্ছ চাহিদা। প্রত্যেক সেক্টর নিজেদের ব্যবসা বাড়াতে শরণাপন্ন হন এসইও ম্যানেজার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ইমেইল মার্কেটিং ম্যানেজার, কনটেন্ট ম্যানেজার, গুগল অ্যাড ম্যানেজার এই সবকিছুর।
কেন এবং কিভাবে শুরু করবেন ডিজিটাল মার্কেটিং?
ধরুন আপনার নিজস্ব কোনও বিজনেস রয়েছে কিংবা আপনি কোনও কোম্পানির মালিক সে ক্ষেত্রে আপনার ডিজিটাল মার্কেটিং গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হয়ে উঠবে ভবিষ্যতে। কারণ আপনি যে বিজনেস করছেন তা তো দরকার সকলের কাছে পৌঁছানোর! তা তো এমনি এমনি সকলের কাছে পৌঁছাবে না। এর জন্য চাই সঠিক প্রচার।
প্রচার তখনই হবে যখন আপনি মার্কেটিং প্রোমোশনের দিকে ঝুঁকবেন। মার্কেটিং প্রমোশনের মধ্যে আপনি অডিয়েন্স এর কাছে এটা পৌঁছে দেবেন আপনার ব্যবসার পণ্যগুলি কেন তারা নেবে! তার মধ্যে ইউএসপি কি রয়েছে! এই পণ্যগুলোর কাছে গ্রাহকরা পৌঁছাবেনই বা কিভাবে! সমস্ত কিছুই থাকবে এর অন্তর্ভুক্ত।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
এটি এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেখানে আপনি গুগলকে নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ প্রদান করবেন এবং তার ফলে গুগল তার প্রথম পৃষ্ঠায় আপনার ওয়েবসাইট দেখাবে। এই মার্কেটিং এর মাধ্যমে যে কোনও কোম্পানি দ্রুততার সঙ্গে তার পরিচিতি করতে পারেন সকলের কাছে।
কনটেন্ট মার্কেটিং
কথাতেই রয়েছে কনটেন্ট ইস কিং, আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের মধ্যে দিয়ে যেকোনো কনটেন্ট লিখে সুন্দর করে প্রমোশন করতে পারেন তাহলে আপনাকে আর চিন্তা করতে হবে না। বর্তমানে কনটেন্ট দুই ধরনের দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ কাজে লাগাচ্ছে ভিডিও কনটেন্টের প্ল্যাটফর্ম থেকে আবার কেউ কেউ কাজে লাগাচ্ছে টেক্সট কনটেন্টের প্লাটফর্মটিকে। আজকালকার দিনে দাঁড়িয়ে মানুষ ভিডিও দেখতেই বেশি পছন্দ করেন। কারণ মনোযোগ দিয়ে টেক্সট পড়ার ধৈর্য অনেকের কাছেই নেই।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
পলিসি অনুযায়ী আপনি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যত মার্কেটিং করতে পারবেন আপনার পাবলিসিটি বা পরিচিতি ততটাই বাড়বে। অনেকটা বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে আপনার বিজনেস। এতে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কেটিং কিংবা ব্যবসার প্রেজেন্টেশন বা পরিচিতি খুব সহজেই উন্নত করতে পারবেন।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এক্ষেত্রে আপনাকে নিজের কোনও পণ্য সেল করতে হবে না। বরং আপনি সেল করবেন অন্যের পণ্য। আপনার মূল কাজ থাকবে অন্যের কোনও পণ্য সেল করিয়ে নেওয়া। এর বিনিময়ে আপনি পাবেন মোটা অংকের একটি কমিশন। আজকালকার যুগে অনেকেই Instagram এর মাধ্যমে ছোট ছোট ভিডিও করে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে থাকেন। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পথ রয়েছে অনেক। শুধুমাত্র আপনাকে শিখতে হবে সঠিক ব্যবহার।
একজন সঠিক ডিজিটাল মার্কেটের কিভাবে হবেন আপনি?
যেকোনো কাজেই সাফল্য পেতে গেলে লাগে ধৈর্য, বেশ কিছুটা সময়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ‘কাজ করে যাও ফলের আশা করোনা’ এই মন্ত্রটি আপনাকে মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে যতদিন না আপনি সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছাচ্ছেন। সঠিক অধ্যাবসায়ের ফলে আপনি পৌঁছে যাবেন সফলতার শীর্ষে।
তবে যারা ধৈর্য ধরে সঠিক সময় অবধি অপেক্ষা করতে পারেন তারাই নিজেদের ভবিষ্যৎ গড়তে সক্ষম হোন। সেটা যে কোনও কাজের ক্ষেত্রেই। প্রতিনিয়ত আপনি যে ফিল্ডে কাজ করছেন সেটি নিয়ে চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। দিনে দিনে নিজেকে কিভাবে আরো উন্নত করা যায় সেই দিকেও নজর রাখতে হবে।
Digital Marketing এর ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত?
আপনাদের কাছে এর জন্য বেশ কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরি। সবার প্রথমেই আপনার আমার পরিচিত ফেসবুকের প্রসঙ্গে আসি। ফেসবুক নিজের যাত্রা শুরু করেছিল ২০০৪ সালে। তখন কিন্তু কেউ চিনত না। ফেসবুক থেকে কোটি কোটি রেভিনিউ বার করা যায় তাও জানতো না। আস্তে আস্তে এই প্লাটফর্মটি প্রত্যেক মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আজকাল মানুষ ইনস্টাগ্রাম কিংবা অন্যান্য অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ফেসবুক নেই এমন কিন্তু খুঁজে পাওয়া কঠিন। ৮ থেকে শুরু করে ৮০ অবধি যে কোনও বয়সের মানুষের কাছে রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। বর্তমান জেনারেশন যত বড় হবে ততই ফেসবুক ব্যবহারকারী সংখ্যা আরো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকবে।
ফেসবুক থেকে যত মানুষ নিজেদের উপার্জনের জায়গা খুঁজে নেবেন ততই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভবিষ্যৎ নিরাপদে থাকবে। ফেসবুকের কাছে রয়েছে বিভিন্ন এড ক্যাম্পেইন। যেখানে আপনি সামান্য কিছু টাকা বিনিয়োগ করলেই আপনার ব্যবসা পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে।
আগামী দিনে এরকম আরো নিত্যনতুন প্ল্যাটফর্ম আপনাদের সামনে খুলে যাবে। তবে বর্তমানে যেভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে, সুতরাং বলাই যায় সময় এগোবে ততই এই চাহিদা বাড়তেই থাকবে বই কমবে না।
এখনো পর্যন্ত যারা যারা নিজের ভবিষ্যৎ কোন দিকে নিয়ে যাবেন সেটা ঠিক করতে পারছেন না তাদের জন্যই রইল আজকের এই প্রতিবেদন। সবটা ভালো করে পড়ুন, বুঝুন, কোন প্রশ্ন থাকলে সেটাও নিজে খুঁজে বার করার চেষ্টা করুন। রয়েছে ইউটিউব। আজকাল যেকোনো প্রশ্নের উত্তরের সমাধান খুব সহজেই সেখানে পাওয়া যায়।