Online Earnings: ২০২৪ এর নভেম্বর মাসে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষে যোগ্য ব্যক্তিদের যোগ্য চাকরি পাওয়ার বিষয়ে প্রতিযোগিতা এমন জায়গায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে বেশিরভাগ ব্যক্তি সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে থাকলেও চাকরি পেতে অনেকটা সময় লেগে যাচ্ছে অথবা অনেক সময় বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে যোগ্য ব্যক্তিরা চাকরি পেতে সক্ষম হচ্ছেন না। অপরদিকে বেসরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের দক্ষতার প্রয়োজন হয়ে থাকে।
এমন অবস্থায় ভারতবর্ষের প্রচুর যুবক-যুবতীরা নিজেদের ভবিষ্যৎ কে স্থির করতে ব্যবসাকেই বেছে নিতে চাইছেন। কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই লোকসানের প্রচুর সম্ভাবনা থেকে যায়। তাহলে এখন কী করা যেতে পারে?
বর্তমান সময়ে বাড়িতে বসেই রোজগার করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে।। তার মধ্যে সবথেকে লাভ দায়ক উপায় হল নিজের একটি ওয়েবসাইট (Website) তৈরি করে সেখান থেকে রোজগার (Online Earnings) করা। কিন্তু এই বিষয়ে বেশিরভাগ যুবক যুবতী অবগত নন। তাই আজকের এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা আপনাদের কাছে তুলে ধরতে চলেছি ওয়েবসাইট তৈরি করার বিভিন্ন পদ্ধতি এবং সেই ওয়েবসাইটের সাহায্যে রোজগার করার উপায় গুলি।
তাই আপনি যদি ওয়েবসাইট বানানোর সমস্ত পদ্ধতি এবং নিয়মাবলী সম্পর্কে শুরু থেকে জেনে আগামীকাল থেকেই নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে রোজগার শুরু করতে চান তাহলে এই প্রতিবেদনটি অবশ্যই সম্পূর্ণ পড়তে হবে।
ওয়েবসাইট (Website) কি?
ওয়েবসাইট হলো অনেকটা আমাদের বইয়ের পাতার মত। যেমন একটি বই হাতে নিয়ে পরপর পাতাগুলি খুলে সেই বইয়ের ভিতর তার বিভিন্ন তথ্য আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয় তেমনি ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও বিভিন্ন তথ্য সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। একটি ওয়েবসাইট মূলত বিভিন্ন কনটেন্ট (Content) অর্থাৎ গল্প, কবিতা, ফটো, ভিডিও, অডিও ইত্যাদি বিষয়গুলিকে বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমাদের সাহায্য করে থাকে।
আমরা কোন বিষয়ে সম্পর্কে অবগত হতে চাইলে গুগল ক্রোম (Google Chrome) বা যেকোনো ওয়েব ব্রাউজারের (Web Browser) মাধ্যমে সার্চ (Search) করে থাকি। তারপরেই যে সমস্ত লিংকগুলি আমাদের সামনে প্রদর্শিত হয় সেগুলিকে এক একটি ওয়েবসাইট বলা হয়ে থাকে।
একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে বিশ্বব্যাপী তার বিস্তার ঘটলে সারা বিশ্বের প্রচুর মানুষ ওয়েবসাইটের কনটেন্ট সম্পর্কে অবগত হতে পারেন। এবং এভাবেই আপনার ওয়েবসাইটটি সকলের কাছে পৌঁছে গেলেই আপনি সেই ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই প্রচুর টাকা রোজগার করতে সক্ষম হবেন।
তবে এই রোজগারের জন্য বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে এবং সঠিক নিয়ম অবলম্বন করে ওয়েব পেজটিকে ডেভেলপ করতে হবে। তাহলে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে কোন কোন বিষয়গুলি সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে সেগুলি বিস্তারিতভাবে নিচে দেওয়া হল।
What Is Domain?
একটি ওয়েবসাইট বানাতে গেলে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তার ডোমেন বা নাম। যে কোন মানুষকে আমরা যেমন তার নাম দিয়ে সকলের থেকে আলাদাভাবে শনাক্ত করে থাকি তেমনি একটি ওয়েবসাইট বা ওয়েব পেজকেও (Web Page) তার নামের মাধ্যমেই মানুষ চিনে থাকে। প্রতিটি ওয়েবসাইটের একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা হয়ে থাকে। সেই ঠিকানার মধ্যে ওয়েবসাইটের নাম এবং তার বিশেষত্ব প্রদর্শিত হয়।
World Wide Web এর মধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট নিজেদের স্থান দখল করে থাকে। সেই কারণেই একটি ওয়েবসাইটের একটি ইউনিক নাম এবং ঠিকানা থাকা আবশ্যক। তাই আপনার নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সবার আগে সেই ওয়েবসাইটের একটি ইউনিক নাম এবং ঠিকানা তৈরি করতে হবে। ওয়েবসাইটের এই নামসহ ঠিকানাকেই ডোমেন বলা হয়ে থাকে।
এটি মূলত আপনার সার্ভার এক্সেস (Server Access) করার ক্ষেত্রে অথবা ওয়েবসাইটটি শনাক্তকরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। তাই একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার ক্ষেত্রে সবার আগে আপনাকে সেই ওয়েবসাইটের ডোমেন নাম তৈরি করে নিতে হবে।
What Is CMS?
CMS এর পুরো কথা হল কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (Content Management System)। একটু ওয়েবসাইট তৈরি করার ক্ষেত্রে ওয়েবপেজ গুলিকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে উপস্থাপনা করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ওয়েবসাইট যদি সুন্দরভাবে দর্শকদের কাছে প্রদর্শিত না হয় তাহলে তার ভেতরে যত ভালো তথ্যই থাকুক না কেন মানুষ উৎসাহী হবেন না।
সেই কারণে বিশ্বের মানুষের কাছে নিজের ওয়েবসাইট প্রদর্শিত করার ক্ষেত্রে সবার আগে CMS-এর মাধ্যমে আপনার কনভেন্টগুলো ম্যানেজ করে সুন্দর করে মানুষের সামনে প্রদর্শিত করতে হবে। CMS-এ সাধারণত সমস্ত উপযোগী টুল (Tool) গুলি আগে থেকেই নির্ধারিত করা থাকে সেই কারণে কম সময়ে কম খরচে সহজেই ওয়েবসাইটটি দর্শনযোগ্য করে তোলা যেতে পারে।
অবশ্যই CMS-এর মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য কোন রকম খরচ অথবা অতিরিক্ত দক্ষতার প্রয়োজন হয় না তাই বর্তমান সময়ে ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সিএমএস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সারা বিশ্বের প্রচলিত জনপ্রিয় সিএমএস গুলি হল- WordPress, Joomla, Drupal, Magento ইত্যাদি।
ওয়ার্ডপ্রেস (WordPress) কী?
ওয়ার্ডপ্রেস হলো সারা পৃথিবীর মধ্যে সবথেকে জনপ্রিয় সিএমএস বা কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখান থেকে সহজেই রোজগার শুরু করা সম্ভব। সারা বিশ্বজুড়ে ওয়ার্ডপ্রেস সব থেকে জনপ্রিয় হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে।
Word Press-এর সুবিধা?
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে নিজের ওয়েবসাইটটি তৈরি করে ফেলতে পারবেন।
- কোন রকমের ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রেই আপনি এটিকে সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
- এই ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারের জন্য আপনাকে কোন রকম কোডিং (Coding) বা প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ (Programming Language) জানার প্রয়োজন হবে না।
- ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে বিভিন্ন থিম (Website Theme) তৈরি করা সম্ভব। এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটের ম্যানেজমেন্টও অত্যন্ত সহজ এবং খরচহীন।
Word Press এর ব্যবহার?
তাই স্বাভাবিকভাবেই নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহার করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। তাই এবার দেখে নেওয়া যাক একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য আপনি ওয়ার্ডপ্রেসকে কীভাবে ব্যবহার করবেন বা এক কথায় ওয়ার্ডপ্রেসের মাধ্যমে নিজের ওয়েবসাইটটি কোন পদ্ধতিতে তৈরি করবেন?
১) ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য সবার আগে আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে ওয়ার্ড প্রেস সফটওয়্যারটি ইন্সটল (Software Install) করে নিতে হবে।
২) ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার টি ইন্সটল হয়ে গেলে, তার মধ্যে আপনার ওয়েবসাইটের বিভিন্ন ডিটেলস যেমন Web Adress বা Domain নাম Connect করে আপনাকে নিজের ওয়েব পেজটি চালু করে নিতে হবে।
৩) এরপর আপনি আপনার ওয়েবসাইটে যে বিষয়ে কনটেন্ট প্রদর্শিত করতে চান, সেটি ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যার এর মধ্যেই ড্রাফ্ট হিসাবে তৈরি করে নিতে হবে।
৪) এরপরে ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ওয়েব পেজের থিম পছন্দ করে বেছে নিতে হবে।
৫) এরপরে সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় আপনার ওয়েবসাইটটি প্রদর্শিত করার যোগ্যতা লাভ করবে। আপনি প্রয়োজনীয় সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে আপনার ওয়েবসাইটটি শেয়ার করে দিতে পারেন। এবং এর মাধ্যমে সারা বিশ্বের অন্যান্য মানুষদেরও আপনার ওয়েবসাইটটি দেখার সুযোগ করে দিতে পারবেন।
নিজের ওয়েবসাইট তৈরি না করেও ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধ্যমে ওয়েব পেজ ডেভেলপমেন্ট (Webpage Development) শিখে বা ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট এর বিভিন্ন কাজ শিখে নিয়ে খুব সহজেই লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করা সম্ভব। পৃথিবীর বহু মানুষ এই ভাবেই নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরি না করেও ফ্রিল্যান্সিংয়ের (Freelancing) মাধ্যমে রোজগার করছেন।
ওয়েবসাইট থেকে কিভাবে রোজগার সম্ভব?
নিজের স্বপ্নের ওয়েবসাইটটি তৈরি করে ফেলার পর সহজেই বিজ্ঞাপনের (Advertising) মাধ্যমে আপনি রোজগার শুরু করে দিতে পারবেন। আপনি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে Google AdSense এর সাহায্যে রোজগার শুরু করতে পারবেন এর জন্য অবশ্যই আপনার ওয়েবসাইটটি মনিটাইজ (Monetize) হওয়া প্রয়োজন। কোন রকম খরচা ছাড়াই নিজের ধাপ গুলি অবলম্বন করে একটি ওয়েবসাইট মনিটাইজ (Website Monetize) করা সম্ভব।
১) Google এর বিভিন্ন বিজ্ঞাপন আপনার ওয়েবসাইটে প্রদর্শনের মাধ্যমে গুগল এডসেন্স এর সাহায্যে খুব সহজেই আপনি রোজগার শুরু করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটে গুগলের যে বিজ্ঞাপনগুলি প্রদর্শিত হবে সেই বিজ্ঞাপনগুলির অপুর প্রতিটি ক্লিকের ভিত্তিতে আপনি রোজগার শুরু করতে পারবেন।
২) এছাড়াও অন্য কোন কোম্পানির বা ব্র্যান্ডের এডভার্টাইজমেন্ট যদি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে পারেন তাহলে সে ক্ষেত্রেও প্রচুর টাকা রোজগার করার সুযোগ থাকছে আপনার কাছে।
৩) এছাড়াও বিভিন্ন মার্কেটিং (Marketing) অথবা অনুদান গ্রহণের মাধ্যমেও আপনার ওয়েবসাইট থেকে আপনি সহজেই রোজগার করতে পারবেন।
তাই বর্তমান সময়ে নিজের ওয়েবসাইট তৈরি করে সেটা মনিটাইজড করিয়ে রোজগার শুরু করা বিভিন্ন দিক থেকেই জনপ্রিয়তা লাভ করছে। এক্ষেত্রে আপনার রোজগারের পরিমাণও বিনিয়োগের তুলনায় যথেষ্ট ভালো মানের হয়ে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে মনোযোগ এবং ধৈর্যশীলতার প্রয়োজন হয়।
তাই আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রোজগার শুরু করতে চান তাহলে আজকের প্রতিবেদন থেকে জানা সমস্ত ধাপ গুলি অবলম্বন করে সহজেই লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার শুরু করতে পারেন। আজকের প্রতিবেদনটির মাধ্যমে যে সমস্ত তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম তা যদি আপনারা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেন তাহলে এগুলি অবশ্যই ফলদায়ক হবে। তাই আজকেই আপনার ওয়েবসাইট তৈরির শুভ যাত্রার সূচনা করতেই পারেন।