Digital Marketing: একবিংশ শতাব্দীতে চিরাচরিত চাকরি এবং ব্যবসার পাশাপাশি রোজগার করার বিভিন্ন উপায় তৈরি হয়ে গিয়েছে। বিশ্বায়নের এই সময়ে একটু বুদ্ধি খাটালেই বা একটু ভালোভাবে গবেষণা করলেই আপনি কিন্তু প্রচুর টাকা রোজগার করার বিভিন্ন উপায় নিজের সামনে দেখতে পাবেন।
বর্তমানে যে হারে কম্পিউটার ল্যাপটপ তথা স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ছে তাতে সারা পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে ঠিকই তবে এর পাশাপাশি আপনি যদি এই যন্ত্র গুলির শুভ দিকগুলি বিবেচনা করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে এই একটি হাতের মুঠো ফোন থেকেই প্রতিমাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করা সম্ভব।
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট নেই এমন মানুষের সংখ্যা প্রায়ই নেই বললেই চলে। ভারতবর্ষের মানুষেরাও সেই বিষয়ে মোটেই পিছিয়ে নেই। যার ফলে বর্তমানে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে নিজেদের রোজগার শুরু করার বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছেন।
এবারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রোজগার করার ক্ষেত্রে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমাদের সামনে এসে থাকে তা হল ডিজিটাল মার্কেটিং। আপনি কি জানেন শুধুমাত্র এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমেই আপনি প্রতি মাসে লক্ষাধিক টাকা রোজগার করে নিজের গাড়ি বাড়ি তৈরি করে নিতে পারেন?
হ্যাঁ, বর্তমান যুগে এটা অবশ্যই সম্ভব। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) এর মাধ্যমে কীভাবে নিজের রোজগার শুরু করবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে আজকের এই প্রতিবেদনটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবশ্যই পড়ে নিতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং (Digital Marketing) কী?
মার্কেটিং (Marketing) কথার আক্ষরিক অর্থ হলো ব্যবসা বা ক্রয় বিক্রয় করা। একটি পণ্য বিক্রয় করার জন্য আমাদের বিভিন্ন ধরনের গ্রাহকের কাছে সেই জিনিসটি প্রদর্শিত করতে হয়। এটিকে এক কথায় অ্যাডভার্টাইজমেন্টও বলা যেতে পারে।
কিন্তু এটি সাধারণত সামনাসামনি হয়ে থাকে। তবে বর্তমান যুগে এই ধরনের অফলাইন মার্কেটিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটিং বা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সূচনা হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে সাধারণত আমরা মোবাইল ফোন বা টিভির পর্দায় বিভিন্ন জিনিসের এডভার্টাইজমেন্ট দেখতে পাই। এছাড়াও ডিজিটাল মার্কেটিং এর বেশ কিছু পদ্ধতির রয়েছে বা বিভাগ রয়েছে।
এক কথায় বলতে গেলে বিভিন্ন গ্রাহকের কাছে একটি নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি করার জন্য সম্পূর্ণ অনলাইন মাধ্যমে যে ধরনের ব্যবসার পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে তাকেই আমরা ডিজিটাল মার্কেটিং বলে থাকি।
এই ডিজিটাল মার্কেটিং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া (Social Media) সাইটের মাধ্যমে অথবা অনলাইন যে কোন মাধ্যমে করা যেতে পারে। বর্তমান সময়ে প্রচুর মানুষ ডিজিটাল মার্কেটিং এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে রোজগার শুরু করে দিয়েছেন। তবে অনেকেই এমন রয়েছেন যারা এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত অবগত নন।
সেই কারণে এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সেই রকম প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে না। তাই আপনি যদি বিভিন্ন সরকারি অথবা বেসরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা না করে সরাসরি নিজের দক্ষতা ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে তৈরি করতে পারেন তাহলে এটি অবশ্যই লাভলাইক হতে পারে। তাহলে আসুন আজকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে কোন কোন পদ্ধতিতে আপনারা রোজগার করতে পারবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন Digital Marketing গুরুত্বপূর্ণ?
চিরাচরিতম মার্কেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে ভীষণ সংখ্যক গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো একেবারেই অসম্ভব। এছাড়াও যুগের অগ্রগতির সাথে সাথে বিভিন্ন মার্কেটিং বা ব্যাবসার ধরনও বদলে যাচ্ছে। বর্তমানে সমস্ত কিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বা বলা যেতে পারে ডিজিটালই আবদ্ধ হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এই সব থেকে বেশি লাভ পাচ্ছে গ্রাহক (Customer) থেকে বিক্রেতা (Seller) সবাই।
Digital Marketing- এর সুবিধা
১) ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট গ্রাহকের কাছে প্রয়োজনীয় দ্রব্য পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে বিক্রেতাকে এক এক করে গ্রাহককে ডেকে ডেকে নিজের জিনিস প্রদর্শন করতে হয় না।
২) সম্পূর্ণ ইন্টারনেটকে (Internet) কাজে লাগিয়ে এই মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মানুষের কাছে নিজের ব্যবসার প্রচার করা সম্ভব হয়।
৩) ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে প্রচুর সংখ্যক অর্থ ব্যয় না করেই (No Investment) খুব সহজে নিজের ব্যবসার অগ্রগতি এবং সেই ব্যবসার জন্য গ্রাহক পাওয়া সম্ভব হয়।
কোন কোন উপায়ে Digital Marketing করা সম্ভব?
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেও দু’ধরনের বিভাগ রয়েছে: ১) অনলাইন মার্কেটিং এবং ২) অফলাইন মার্কেটিং।
Online Digital Marketing
1) Search Engine Optimization:
অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সব থেকে জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে স্যার ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (Search Engine Optimization)। এই পদ্ধতিতে সাধারণ মানুষ যে ধরনের সার্চ করছে সেই সম্ভাবনা গুলিকে ঠিকমতো ব্যবহার করে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে বা নিজের পেজকে জনপ্রিয় করে তোলা যেতে পারে। নিজের কন্টেন্টের সঠিক Keyword গুলি ব্যবহার করার মাধ্যমে খুব সহজেই কোনো রকম খরচ ছাড়াই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন সম্ভব।
2) Content Marketing:
নিজের ব্লগ (Blog Website) তৈরি, অথবা অন্য যেকোনো ধরনের কনটেন্ট মানুষের সামনে প্রদর্শিত করে বর্তমান সময়ের রোজগার করা সম্ভব। এর জন্য গল্প বলা, গান করা, বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করা অথবা বিভিন্ন সম্প্রতিকালীন ঘটনা মানুষের সামনে তুলে ধরার মাধ্যমে রোজগার (Online Earnings) খুব শুরু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিজের তৈরি করা কন্টেনটার মাধ্যমেই রোজগার করা সম্ভব আর সেই কারণেই এই মার্কেটিং পদ্ধতিকে কন্টেন মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে।
3) Social Media Marketing:
বর্তমানে সব থেকে জনপ্রিয় ডিজিটাল মার্কেটিং গুলির মধ্যে সবথেকে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের মাধ্যমে নিজের বিক্রয় যোগ্য জিনিসগুলি প্রদর্শিত করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার যে পদ্ধতিটি বর্তমানে ঘরে ঘরে দেখা যাচ্ছে সেটি হল সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং। Facebook, Twitter, Instagram ইত্যাদির মাধ্যমে বর্তমানে ঘরের ক্ষুদ্র শিল্পগুলিও পৃথিবী জুড়ে প্রদর্শিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
4) Affiliate Marketing:
নিজের একটি চ্যানেলে বা অনলাইন মাধ্যমে অন্যের কোন ইনস্টিটিউশন অথবা কনটেন্টকে রেফার করার পদ্ধতিকে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্র সাধারণত অন্যকে বা অন্যের ব্যবসাকে রেফার করার মাধ্যমে প্রচুর টাকা রোজগার করে থাকেন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররা।
Offline Digital Marketing
1) Radio Marketing:
ভারতবর্ষের প্রায় ঘরে ঘরেই রেডিও সোনার প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে অনেক যুগের অগ্রগতি ঘটলেও অনেকেই রেডিওর মাধ্যমে খবর অথবা গান শুনতে পছন্দ করেন। তবে আমরা সবাই প্রায় দেখেছি রেডিওতে বিভিন্ন শো এর মাঝখানে বিভিন্ন ধরনের অ্যাডভার্টাইজমেন্ট (Advertisement) প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। রেডিওর মাধ্যমে এই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট করাকেই রেডিও মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর রেডিওর মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যায়।
2) Television Marketing:
সোশ্যাল মিডিয়ার আগে থেকেই যে ডিজিটাল মার্কেটিং সবথেকে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল তা হলো টেলিভিশন মার্কেটিং। টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাঝে এডভার্টাইজমেন্ট এর একটি সময় নির্ধারণ করা থাকে। বিভিন্ন কোম্পানির এই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট গুলিকে টেলিভিশন মার্কেটিং বলা হয়ে থাকে।
এছাড়াও অফলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন ফোন কল অথবা SMS-এর মাধ্যমে মার্কেটিং করা যায়। এর পাশাপাশি অনেক রাস্তার মোড়ে হোডিং এর মাধ্যমেও বিভিন্ন মার্কেটিং হয়ে থাকে।
Career Of Digital Marketing
ডিজিটাল মার্কেটিং এমন একটি জিনিস যার মাধ্যমে বর্তমানে প্রচুর মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকার রোজগার করতে সক্ষম হচ্ছেন। সঠিকভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং জানা থাকলে এই বিষয়ে আপনাকে পিছনে ফেলে দেওয়ার ক্ষমতা আর কারোর নেই। বর্তমান যুগের প্রতিনিয়তই ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভিন্ন বড় বড় কোম্পানিতে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজন হয়ে থাকে সেই কারণেই এই বিষয়টি সম্পর্কে শিক্ষাবাদ করে নিজের জীবনে অগ্রগতি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। চিরাচরিত চাকরি অথবা ব্যবসার থেকে বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক বেশি ফলদায়ক। ভালো মানের ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে প্রতি মাসে ৫০,০০০ থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রোজগার করা সম্ভব।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অথবা কন্টেন্ট মার্কেটিং এর মাধ্যমে এখন অনেকেই প্রচুর রোজগার করতে সক্ষম হচ্ছেন। বর্তমান সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং সবথেকে বেশি ফলদায়ক ক্যারিয়ার অপরচুনিটি গুলির মধ্যে অন্যতম। বর্তমান সময়ে এই বিষয়ে অনেক নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বিভিন্ন কোর্স করিয়ে থাকে। তাই এই বিষয়ে সঠিক শিক্ষালাভ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের দুর্দান্ত এক কর্মজীবনের সূচনা করে দিন।