জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ নানা রকম কাজ করে। আর এভাবেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন পেশা। বিশেষ করে কোভিড সময় এক নতুন পথের দিশা দেখিয়েছে, তা হলো ওয়ার্ক ফ্রম হোম।
স্মার্ট ফোন মানেই ইন্টারনেট সংযোগ আর তাতেই হাতের মুঠোয় পৃথিবী। যবে থেকে ইন্টারনেট সংযোগ এসেছে ততই ধীরে ধীরে আপডেট হচ্ছি আমরা। অনলাইন ট্রানজাকশন থেকে শুরু করে অনলাইন অর্থ উপার্জনের রাস্তা খুলে গেছে। আর অনলাইনে অর্থ উপার্জনের অন্যতম রাস্তা হয়ে উঠেছে ডিজিটাল মার্কেটিং।
বর্তমানে তরুণরা একদিকে যেমন প্রচলিত পেশার দিকে ঝুঁকছে তেমনি বিভিন্ন সৃজনশীল ও চ্যালেঞ্জিং পেশাকেও বেছে নিচ্ছে। আবার অনেকে নিজেদের মৌলিকতা রেখে মেধা ও মননের সমন্বয়ে নতুন পেশাজীবন শুরু করছে। তবে বর্তমানে সব থেকে বেশি যে ক্ষেত্রে আগ্রহ বাড়ছে তরুণদের তা হল ডিজিটাল মার্কেটিং।
ফুল টাইম হিসাবে ডিজিটাল মার্কেটার! Security আছে তো?
এই প্রশ্ন কিন্তু প্রত্যেক বাবা-মায়ের মনেই থাকে। বর্তমানে কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভালো গ্রোথ দেখা যাচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন আমাদের জীবনে অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে জড়িয়ে গেছে আর তাই এই প্লাটফর্ম গুলিকে ভিত্তি করে ডিজিটাল মার্কেটারের প্রয়োজন বাড়ছে। তাই এই সেক্টর থেকে মোটা অংকের উপার্জন করা এখন সম্ভব। সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার থেকে অনলাইন মার্কেটিং সর্বত্রই ডিজিটাল মার্কেটিং এ দক্ষ এমন প্রয়োজন হয় তাই ভবিষ্যতে এর চাহিদা বাড়বে বই কমবে না তা ধারণা করায় যায়।
ডিজিটাল মার্কেটার হতে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে কোর্স কতটা প্রয়োজন?
এই ক্ষেত্রে যেমন চাহিদা বাড়ছে তেমনি বাড়ছে প্রতিযোগিতা। তাই কেবল ইউটিউব আর সোশ্যাল মিডিয়া থেকে এই বিষয়ে জ্ঞান নিলেই হবে না প্রয়োজন রয়েছে নির্দিষ্ট কোর্সের। এই বিষয়ের ওপর দক্ষ হতে সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমা কোর্স করতে হবে। বেসরকারি বহু সংস্থা এই কোর্স করিয়া থাকে এমনকি এখন সরকারি বহু ইউনিভার্সিটি ও ডিজিটাল মার্কেটিং এর কোর্স করায়।
কলকাতার কোথায় কোন ডিজিটাল মার্কেটিং পড়ানো হয়?
যতদিন যাচ্ছে ততই প্রচলিত মার্কেটিং পদ্ধতি থেকে সরে এসে মানুষ ব্যবসার প্রসারের উদ্দেশ্যে ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপরেই নির্ভর করছে। যার ফলে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরের গুরুত্ব কিন্তু প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। পরিসংখ্যান বলছে বড় জায়ান্ট কোম্পানিগুলি অলরেডি ডিজিটাল মার্কেটিং এর সিফট হয়েছে। ফলত এই সেক্টরে কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।
চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিং এই দুইভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়ে তোলার কিন্তু সুযোগ রয়েছে। তবে এই ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিষয়টা এতটাও সহজ নয়। এক একটি বিজনেসের জন্য এক একটি ধরনের মার্কেটিংয়ের প্রয়োজন হয়। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গড়ার আগে অবশ্যই এই বিষয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। আর এরজন্য প্রয়োজন কোর্সের।
কলকাতায় ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর বহু সংস্থা কোর্স করায়। তারমধ্যে রয়েছে–
- NIFT Kolkata– সার্টিফিকেট ইন ডিজিটাল মার্কেটিং।
- IIM Calcutta– এ্ক্সিকিউটিভ পোগ্রাম অন ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি।
- Karmick Institute, Kolkata– সার্টিফিকেট ইন অ্যাডভান্স ডিজিটাল মার্কেটিং
- IIDE– অনলাইন ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স
- NIIT– সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং শর্ট টার্ম কোর্স
ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে চাকরির ভবিষ্যত কী?
বর্তমান সময়ে বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভিস বা পণ্য ডিজিটাল ভাবে মার্কেটিং করার জন্য লোক নিয়োগ করে থাকে। আর বর্তমানে আমরা সবথেকে বেশি ব্যবহার করি ইন্সটা, ফেসবুক ইত্যাদি রকম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মগুলিকে কেন্দ্র করেই ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরিসর বাড়ছে। ফলে প্রয়োজন পড়ছে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞ এমন ব্যক্তির। কোনো প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে নিযুক্ত হয়ে ক্যারিয়ার গড়া সুযোগ রয়েছে।
ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং
বর্তমানে টাকা উপার্জন করার অন্যতম ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে ফ্রিল্যান্সিং। আপনার যোগাযোগের দক্ষতা, কাজের দক্ষতার ওপর নির্ভর করে বাড়িতে বসেই ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে কাজ করতে পারেন।
ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কোন সেক্টরে চাহিদা বেশি?
আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সব সেক্টরে ডিজিটাল মার্কেটিং এর চাহিদা রয়েছে। এসইও ম্যানেজার, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, ই-মেল মার্কেটিং ম্যানেজার, কনটেন্ট মার্কেটিং, গুগল অ্যাড ম্যানেজার এরকম একাধিক সেক্টর রয়েছে।
কেন ও কীভাবে করবেন ডিজিটার মার্কেটিং?
ধরুন আপনার একটি কোম্পানি বা বিজনেস আছে। কিন্তু আপনি যে কোন বিজনেস করছেন তা সকলের কাছে পৌঁছবে কি করে! আপনার ব্যবসার পণ্যগুলি কতটা ভালো বা দরকারি তা গ্রাহকের কাছে পৌঁছবে কীকরে? আর এই কারণেই প্রয়োজন প্রচার। অর্থাৎ আপনাকে করতে হবে মার্কেটিং প্রমোশন। এরকম অনেক অনলাইন মার্কেটিং সেক্টর রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং-এমন একটি মার্কেটিং কৌশল যেখানে গুগলকে অর্থ প্রদান করতে হয়। এর ফলে গুগলের প্রথম পৃষ্ঠায় আপনার ওয়েবসাইট দেখানো হবে। সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার কোম্পানিকে দ্রুত পরিচিত করতে পারবেন সকলের কাছে।
কন্টেন্ট মার্কেটিং –‘কন্টেন্ট ইজ কিং’, আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সুন্দর প্রমোশনাল ভিডিও চান তাহলে কন্টেন্ট মার্কেটিং প্রয়োজন।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং –এর মাধ্যমে আপনার বিজনেস পাবলিসিটি বাড়বে। সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং আপনার ব্যবসার সোশ্যাল প্রেজেন্টস বা পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করবে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং- এখানে আপনাকে নিজের কোন প্রোডাক্ট সেল করতে হবে না। আপনার কাজ হবে নিজের ওয়েবসাইটে অন্যের বিজনেস এর প্রোডাক্ট প্রমোট করা। এতে আপনি যে ওয়েবসাইটের সাথে অ্যাফিলিয়েট করবেন সেখান থেকে নির্ধারিত পরিমাণ কমিশন পাবেন।
কীভাবে একজন সফল ডিজিটাল মার্কেটার হবেন?
ধৈর্য্যের হাত ধরেই আসে সফলতা। যেকোনো ক্যারিয়ার গড়তেই লাগে ধৈর্য্য আর অধ্যাবসায়। এখানেও কিন্তু বিষয়টি একইরকম। আপনি ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে চাকরি করুন বা ফ্রিল্যান্সিং আপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি নিজেকেও চর্চা চালিয়ে যেতে হবে। মার্কেটিং বিষয়ে বেসিক থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে আর এরমাধ্যমেই আসবে দক্ষতা, পাশাপাশি সফলতাও।
ডিজিটাল মার্কেটার হিসাবে কোন বিষয়গুলি জানতে হবে?
- মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- ইমেইল মার্কেটিং
- সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- মার্কেটিং অটোমেশন
- অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং
এখানেই কিন্তু শেষ নয়। আসলে ডিজিটাল মার্কেটিং-এর সেক্টর অনেক বড়ো। তাই প্রতিনিয়ত শিখতে হবে, স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। যত মার্কেট সম্পর্কে বুঝবেন তত সার্ভিস দিতে পারবেন গ্রাহককে।
ডিজিটাল মার্কেটিং-এর ভবিষ্যত
এরজন্য কয়েকটি উদাহরণ তুলে ধরা যাক বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক নেটওয়ার্ক গুলির মধ্যে একটি Linkdlen. ফেসবুকের আবার শুরু হয়েছিল সেই ২০০৪ সালে। তারপর একে একে এসেছে Whatsapp. যত দিন গেছে তত উন্নত হয়েছে এই প্ল্যাটফর্মগুলি। একে একে যুক্ত হয়েছে নানা ফিচার্স।
এইরকম যত আপডেট সোশ্যাল মিডিয়াগুলিতে আসতে থাকে ততই সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে কেন্দ্র করে ডিজিটাল মার্কেটিং এর বিস্তার গড়ে ওঠে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং সার্চ ইঞ্জিন গুলির ডিজিটাল মার্কেটিং এর পর আরও সহজ করে তুলেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলির উপর ভিত্তি করে অনলাইন ব্যবসা শুরু হয়েছে। সেগুলি আবার সকলের কাছে পৌঁছে দিতে চালু হয়েছে ডিজিটাল মার্কেটিং সিস্টেম। অর্থাৎ ডিজিটাল মিডিয়ার অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং পরিধি বিস্তার করছে। আগামিতে এর পরিধি যে আরো বৃদ্ধি পাবেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকে না।
প্রচারেই প্রসার, একথা সবকিছুর মতোন ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রেও খাটে। এককথায় ব্যবসা বা প্রতিষ্ঠান প্রসারের লক্ষ্যে প্রচার হলো ডিজিটাল মার্কেটিং। তাই আপনি নিজের দক্ষতা প্রসারিত করে যত বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করবেন তত আপনার ব্যবসা বাড়বে।