অসুস্থতা হোক বা কোনো দুর্ঘটনা কখনো বলে আসেনা। আর এই সময় সবথেকে বেশি যা প্রয়োজন পড়ে তা হলো চিকিৎসা। আর বর্তমানে ভালো চিকিৎসা পরিষেবা পেতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা মেটাতে গিয়ে প্রায় সর্বস্ব সঞ্চয় ফুরিয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়। এমন অবস্থায় সবার প্রথমে কাজে আসে Health Insurance।
কিন্তু মোটা অঙ্কের প্রিমিয়াম দিতে হয় বলে প্রচুর পরিবার স্বাস্থ্যবীমা করতে পারেন না। ফলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মতোন ঘটনার সাক্ষী থাকতে হয়। তাই দেশের আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার যাতে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুযোগ পান তাদের জন্য আনা এরকম আরো একটি হেলথ ইন্সুরেন্স স্কীম হলো “আয়ুষ্মান ভারত” (Ayushman Bharat)।
কী এই আয়ুষ্মান ভারত?
এটি একটি স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প যা কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা চালিত। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর গোটা দেশ জুড়ে এই প্রকল্প চালু হয়েছিল।
আয়ুষ্মান ভারতের উদ্দেশ্য কী?
এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বাস্থ্য বীমা প্রদান করা। যাদের কাছে এই কার্ড থাকবে তারা প্রতি বছর 5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য বীমা পাবেন। যদি আপনি অসুস্থ হয়ে থাকেন অর্থাৎ হসপিটালে ভর্তি হতে হয় সেক্ষেত্রে এই অর্থ পেয়ে যাবেন ।
আয়ুষ্মান কার্ডধারীরা কী সুবিধা পাবেন?
প্রতি বছর 5 লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনা মূল্যে স্বাস্থ্য বীমা পাবেন। চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কোনরকম টাকা দিতে হবে না। এই বীমার সুবিধা পেতে হলে আপনাকে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।
আয়ুষ্মান কার্ড পেতে কীভাবে আবেদন জানাবেন?
১) আয়ুষ্মান কার্ড পেতে প্রথমে আয়ুষ্মান ভারত যোজনার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
২) এরপর আপনার সামনে যে হোম পেজটি ওপেন হবে সেখানে বেনিফিশিয়ারি ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।
৩) এবার আপনাকে ‘অনলাইনে আবেদন করুন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
৪) ক্লিক করার পর আপনার মোবাইল নম্বর ও আধার নম্বর দিন।
৫) যে মোবাইল নম্বরটি দিয়েছেন সেই নম্বরে এবার একটি ওটিপি পাবন।
৬) ওটিপি যাচাই হয়ে যাওয়ার পর আপনার পরিবারের সদস্য সম্পর্কে তথ্য পূরণ করতে হবে।
৭) সমস্ত তথ্য দেওয়ার পর সাবমিট বটনে ক্লিক করুন। ও চেক বেনিফিশিয়ারি স্ট্যাটাস অপশনে ক্লিক করে আবেদন প্রক্রিয়ার স্ট্যাটাস চেক করতে পারেন।
আবেদন করতে কী কী নথি প্রয়োজন?
- আধার কার্ড
- রেশন কার্ড
- পারিবারিক পরিচয়পত্র
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিবরণ
কারা আয়ুষ্মান কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন?
১) পরিবারের একজন সদস্য যদি দরিদ্র সীমার নীচে থাকে তার এই কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২) আবেদনকারীকে খাদ্য নিরাপত্তা আইন এর অধীনের সুবিধাভোগী হতে হবে।
৩) Employee’s State Insurance Scheme বা কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্পের একজন সুবিধা ভোগী হতে হবে।
উল্লেখ্য 2011 সালের আর্থসামাজিক অর্থনৈতিক আদমশুমারি অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের বাছাই করা হয়েছিল। তাতে ১০ কোটি পরিবারের মধ্যে গ্রামে ছিল ৮ কোটি পরিবার ও শহরে ছিল ২ কোটি পরিবার। ২০২৪ সালে জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয় এই কার্ডের সংখ্যা ৩০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
এই প্রকল্পে নাবালিকা, মহিলা, প্রবীণ নাগরিকদের বিশেষভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এটাও উল্লেখ্য যে এই কার্ডটি তৈরীর ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের সংখ্যা ও বয়স নিয়ে কোনো বাধা নেই। এই কার্ড আপনার কাছে থাকলে সরকারি হাসপাতাল বাধ্য থাকবে আপনার চিকিৎসা করতে। যাদের স্বাস্থ্যপরিসেবা প্রয়োজন তাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখা যাবে না। অর্থাৎ এই কার্ড থাকলে অর্থের কারণে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবেনা কোনো পরিবার।