ভারতবর্ষে আজও বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে ঘরে কন্যা সন্তান হলেই কপালে পড়ে যায় চিন্তার ভাঁজ। কেননা তাকে বড় করতে হবে, আবার বিয়ে দিতে হবে, শেখাতে হবে লেখাপড়া! মেয়ে অন্যের হয়ে যাবে, তাহলে তার পিছনে খরচ করে কি লাভ! অনেক গ্রাম্য পরিবেশেই এমন চিন্তা-ভাবনা আজও বিরাজমান।
তবে কলকাতা শহরের দিকে কিংবা কলকাতা শহরের আশেপাশে এই চিত্র অনেকটাই বদলে গিয়েছে। ছেলে এবং মেয়েদের সমান প্রায়োরিটি দেওয়া হয়। তবে সব বাবা মায়ের চান নিজেদের মেয়ের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং সুশিক্ষা দিয়ে বড় করতে। দরিদ্র পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ইতিমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে আনা হয়েছে একাধিক স্কিন। সম্প্রতি আরও একটি নতুন স্কিম নিয়ে আমরা হাজির হয়েছি। এই নতুন স্কিম অনুযায়ী ঘরে কন্যা সন্তান থাকলেই পেয়ে যাবেন এক লক্ষ টাকা অবধি।
কোন স্কিমের কথা বলছি? কিভাবে করবেন আবেদন? কারা কারা এই স্কিমের সুবিধা পাবেন? কি কি প্রয়োজনীয় নথি লাগবে? কত টাকা পাবেন মোট? আবেদন করার পদ্ধতি সবকিছুই আমাদের প্রতিবেদনে আজকে রইল বিস্তারিত।।
কোন স্কিমের কথা বলছি?
আজকের প্রতিবেদনে যে স্কিমের কথা বলছি তা হল বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা।
কি এই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা?
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শুরু করেছিলেন তার বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও অভিযান। এই অভিযানের আওতায় একাধিক স্কিম মেয়েদের কথা চিন্তা করেই বানানো হয়েছিল। বিশেষ করে দেশের কন্যা শিশুদের নিরাপদে রাখতে এবং তাদের শিক্ষাগত জীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতেই পরিকল্পনা করা হয়েছিল এই বালিকা সমৃদ্ধি যোজনা স্কিমের। জানা যাচ্ছে এই স্কিম খেলা শুরু করেছিল ১৯৯৭ সালে।
এখনো পর্যন্ত এই প্রকল্পের মাধ্যমে অনেকেই সাহায্য পেয়েছেন। মেয়ের জন্মের পর থেকে শিক্ষা বাবদ যত খরচ হয় সবকিছুই সরকার বহন করে থাকে। জানা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের নারী এবং শিশু উন্নয়ন মন্ত্রকের অধীনেই এই প্রকল্প পরিচালনা করা হয়। যে সমস্ত ঘরে রয়েছে কন্যা সন্তান এবং তারা প্রথম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন তাদের থেকে শুরু করে দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করা পড়ুয়াদের এই টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।।
কারা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন?
এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে হলে সবার প্রথমেই বিপিএল তালিকাভুক্ত হতে হবে পরিবারকে। শহর এবং গ্রাম অঞ্চলের কন্যা সন্তানের জন্মের জন্য সরকারি সহায়তা পাওয়ার যোগ্য হতে হবে উক্ত পরিবারকে। একটি পরিবারের মাত্র দুটি মেয়ে এই প্রকল্পের আওতায় আসবে।
কত টাকা পর্যন্ত সুবিধা দেওয়া হয় সরকার থেকে?
এই প্রকল্প অনুযায়ী প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণীর পড়ুয়াদের ৩০০ টাকা, চতুর্থ শ্রেণী থেকে ৫০০ টাকা, পঞ্চম শ্রেণীতে 600 টাকা, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণীতে ৭০০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীতে ৮০০ এবং নবম ও দশম শ্রেণীতে হাজার টাকা করে ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে এই টাকা বার্ষিক হারেই দেওয়া হয়।
এই টাকা তুলতে পারবেন মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তবেই। মেয়ে যদি ১৮ বছর পর্যন্ত অবিবাহিত থাকে তাহলে স্থানীয় পৌরসভার বা পঞ্চায়েতের সাহায্যে একটি সার্টিফিকেট বানিয়ে নিতে হবে আপনাকে। সেই সার্টিফিকেট পোস্ট অফিসে বা ব্যাংকে গিয়ে দেখালে আপনি টাকা তুলে নিতে পারবেন। তবে আপনার মেয়ে যদি দুর্ঘটনাবসত কখনো মারা যায় সে ক্ষেত্রে আপনি এই টাকা আর তুলে নিতে পারবেন না।
কিভাবে এখানে আবেদন করতে হয়?
যারা যারা এখানে আবেদন করতে ইচ্ছুক তারা অনলাইন এবং অফলাইন দুই মাধ্যমের মধ্যে দিয়েই আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সাহায্য নিতে হবে যে কোনও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী এবং স্বাস্থ্যপরিষেবার কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে একটি ফর্ম নিয়ে নিন আবেদন করার জন্য। ফর্মে যাবতীয় যা কিছু চাওয়া হয়েছে সব কিছুই নির্ভুলভাবে পূরণ করে দিন। তারপর ফর্মটি সাবমিট করুন।
কি কি প্রয়োজনীয় নথিপত্র লাগে?
- বার্থ সার্টিফিকেট
- বাড়ির ঠিকানা
- বাবা মায়ের রেশন কার্ড
- আধার কার্ড
- পরিচয় প্রমাণপত্র